একসময়ে ফুটবলার এবং এ্যাথলেট তৈরির সূতিকাগার ছিল খুলনার দিঘলিয়া। ক্রীড়াঙ্গনে দিঘলিয়ার জৌলুস সেই পাকিস্তান আমল থেকে। এ্যাথলেটিক এবং ফুটবলে পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে অংশ নিয়েছেন দিঘলিয়ার কৃতি ক্রীড়াবিদরা। ফুটবলের খুলনা এবং ঢাকার প্রথম বিভাগ লিগে মাঠ কাঁপিয়েছেন অগণিত খেলোয়াড়। এ্যাথলেটিকেও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসংখ্য ক্রীড়াবিদ তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করে এলাকার সুনাম বয়ে এনেছেন। কিন্তু বর্তমানে তরুণদের মোবাইল এবং মাদকে আসক্তি খেলাধুলার প্রতি অনাগ্রহ তৈরি করছে। ফলশ্রুতিতে তৈরি হচ্ছে না আগের মত খেলোয়াড়।
খেলাধুলায় দিঘলিয়ার পূর্বের সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে দিঘলিয়ার সাবেক কৃতি ফুটবলারদের নিয়ে গঠিত সোনালী অতীত ক্লাব। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রতিভাবান, আগ্রহী খুদে ফুটবলারের অন্বেষণে সোনালী অতীত একাডেমি কার্যক্রম শুরু করেছে।
একাডেমি সূত্রে জানা যায়, প্রথম অবস্থায় অনূর্ধ্ব ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী ১৭০ জনের মধ্য থেকে ৪০ জন প্রতিভাবান আগ্রহী খুদে খেলোয়াড় বাছাই করা হয়। এরপর গত ১৯ মে থেকে এ সকল ক্ষুদে ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। সপ্তাহে পাঁচ দিন বিকাল চারটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত টানা দুই ঘন্টা প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ প্রদান করেন সাবেক কৃতি ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সভাপতি টিপু সুলতান, সাধারণ সম্পাদক জিএম আকরাম হোসেন, হানিফ সরদার, গাজী ফরহাদ হোসেন, মোঃ মকবুল হোসেন, গাজী আব্দুল জলিল, নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত খেলোয়াড় মিলন মুন্সি, মাকসুদুর রহমান, সরকারি এম এ মজিদ ডিগ্রী কলেজের শরীর চর্চা শিক্ষক শেখ কামরুল ইসলামসহ অবসরপ্রাপ্ত সাবেক কৃতি খেলোয়াড়বৃন্দ।
এছাড়া দিঘলিয়ার বিভিন্ন এলাকার প্রতিভাবান, আগ্রহী এ্যাথলেটদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন বাংলাদেশ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এ্যাথলেটিকের বিচারক (জাজ) খান ওলিয়ার রহমান।
বুধবার ( ৪ জুন) সরেজমিনে দিঘলিয়া ওয়াই এম এ ফুটবল মাঠে গিয়ে দেখা যায় এক ঝাঁক খুদে ফুটবলার অনুশীলনে ব্যস্ত রয়েছে। তাদেরকে অনুশীলন করাচ্ছেন সাবেক ফুটবলার টিপু সুলতান, হানেফ সরদার, ফখরুল আলম বাবুল, সাবেক কৃতি ক্রীড়াবিদ খান ওলিয়ার রহমান, মোঃ হাসিম শেখ ও মোঃ সুমন শেখ।
সোনালী অতীত ক্লাবের সভাপতি এক সময়ের ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগের মাঠ কাঁপানো স্ট্রাইকার টিপু সুলতান খুলনা গেজেটকে বলেন, দিঘলিয়া ওয়াই এম এ ক্লাব একটি ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। সারাদেশে এই ক্লাবের একটা সুনাম আছে। এই ক্লাব থেকে অগণিত ফুটবলার তৈরি হয়েছে। এসব ফুটবলার খুলনা জেলা এবং জাতীয় দলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত বড় বড় টুর্নামেন্ট অংশগ্রহণ করেছে। দিঘলিয়ায় ফুটবলের সেই জৌলুস ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা একটি ফুটবল একাডেমি তৈরি করেছি। এটার নাম হচ্ছে সোনালী অতীত ক্লাব ফুটবল একাডেমি। ইতিমধ্যে দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাচ্চাদের নিয়ে আমরা একটা ফুটবল ক্যাম্প শুরু করেছি। এই ক্যাম্পের মাধ্যমে তাদেরকে ভালো মানের প্লেয়ার তৈরি করার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এছাড়া অনেক সময় দেখা যাচ্ছে ছেলেপেলেরা মোবাইল ও মাদকের আসক্ত হয়ে পড়েছে। তাদেরকে ওই জায়গা থেকে দূরে রাখার জন্য পড়াশুনার পাশাপাশি ভালো মানের ফুটবল খেলোয়াড় তৈরি করার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এটার জন্য আমাদের মাননীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং অবসরপ্রাপ্ত সাবেক ফুটবলার এবং এলাকার ক্রীড়াবিদরা আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করছে।
খুলনা গেজেট/এইচ